Life Goes On (2009)

83161689956889281689924

Directed by Sangeeta Dutta
Starring: Girish Karnad, Sharmila Tagore, Om Puri, Soha Ali Khan
Release dates: October 30, 2009 
Running time: 120 minutes
Country: United Kingdom
Language: English

গরু ডাকছে, আমাদের পুরনো বাড়ির
সব গরু:
মুংলি নামে, ঘেঁটি নামে, লক্ষ্মী ও কমলা নামে
আমাদের পুরনো বাড়ির
সব গরু,
ডাকছে,
দু’শো মাইল দূর থেকে…

সবাই চিৎকার করে ডাকছে ওই পঞ্চাশ বছর ও-ই-ই পঞ্চাশ
বছর দূর থেকে
গলা
চিরে যাচ্ছে,
শুনতে পাচ্ছো না?

ওপার থেকে ভেসে আসা এই ডাক নাকি অনেকে জীবনভর শুনতে পায়। তাই হাজার মাইল দূরে থেকেও, নিজের স্ত্রী মঞ্জু’র শেষকৃত্যের ঠিক আগের রাতেও যখন অনেক দিনের লন্ডনপ্রবাসী ডাক্তার সঞ্জয় ব্যানার্জি উদ্দেশ্যহীনভাবে লন্ডনের রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় এবং পূর্ববঙ্গে ফেলে আসা তার শৈশবের ডাক শুনতে পায়, তখন আমাদের আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকে না। তখন অন্য অনেকবারের মতো আমাদের আরেকবার মনে হয়, দেশভাগ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সবসময়ের জন্যই একটি অন্তঃসারশূন্য ধারণা; অহেতুক উৎপাত।

53505606

সিনেমাটির চিত্রনাট্যে শেক্সপিয়ারের ‘কিং লিয়ার’ এর একটা প্রচ্ছন্ন উপস্থিতি চোখে পড়ে। পরিচালক সঙ্গীতা দত্ত নিজেই ব্যাপারটি সরল করে দিয়েছেন। তাঁর ভাষায়-

Life Goes On is inspired by the old tale of King Lear and his daughters. It is trying to find meaning for Shakespeare’s King Lear in a contemporary multicultural British context.

সদ্য বিপত্নীক সঞ্জয় ও তাঁর তিন কন্যার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আমাদের শেক্সপীয়ারের এই কালজয়ী নাটকটির কথাই বারবার মনে করিয়ে দেয়। তারা প্রত্যেকেই যার যার সমস্যা নিয়ে নিমজ্জিত। যেখানে জাতিগত দাঙ্গার দুঃখময় স্মৃতি এতোগুলো বছর বাদেও সঞ্জয়কে নিঃশব্দে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে, সেখানে এক মুসলিম ডাক্তারের সাথে তাঁর মেয়ের প্রনয় মেনে নিতে সে কতটুকু প্রস্তুত? তারা সকলেই কি পারবে ক্রমেই খারাপ হতে চলা পরিস্থিতির সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে?
36466464সঞ্জয় যদি পৌরাণিক লিয়ার হয়ে থাকেন, তবে তাঁর বন্ধু অলকের বাস দর্শনের চোরাগলিতে ; যে নিছক হাস্যরসের মাঝে সত্যটাকে তুলে ধরতে পারার মতো, প্রিয়জনের হিরণ্ময় স্মৃতিকে সম্বল করে ‘জীবন চলে যায়…’ বলতে পারার মতো একজন নিখাদ বোকা মানুষ!
81654205

93394110
মঞ্জুর সাথে তাঁর পরিজনদের স্মৃতিচারণে কিসের যেন একটা স্নিগ্ধতা জুড়ে ছিল পুরোটা সময়। হয়তো মঞ্জুরূপী শর্মিলা ঠাকুরের নিজের স্নিগ্ধতাই এর পেছনে বড় কারণ! সাথে রাবিন্দ্রিক একটা আবহ মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সত্যিই অনন্যা। যুগপৎ বাংলা ও হিন্দিতে ‘সখি, ভাবনা কাহারে বলে’ গানটির চিত্রায়ন যেমন অসাধারণ লেগেছে, তেমনি মুগ্ধ হয়ে নতুন করে আবিষ্কার করেছি রবীন্দ্রনাথের ‘তবু মনে রেখো’ গানটিকেও।

অরুন, শৈলজা কিংবা একটি জিন্দাবাহার লেন

Once upon a time…

এক ছিল রাজা আর এক ছিল রানী। বহু বছর ধরে তারা সুখে-শান্তিতে বাস করছিল।

রাজা-রানী এখানে মনে হয় ঠিক যুতসই হলো না। এখনকার দিনে বুঝদার পাঠক তো বহুদুর, খুদে বিচ্ছুরাই রাজা-রানির গল্প আর খেতে চায় না! তাই আমার গল্পে রাজা-রানী বাদ থাক। এর থেকে বলা যাক-

এক ছিল ছেলে আর এক ছিল মেয়ে। দিনের পর দিন তারা ছিল ভালো বন্ধু।

রূপকথার রাজা-রানির চেয়ে এ-ই অনেক ভালো! রাজা-রানির কোন নাম না থাকলেও চলে। কিন্তু সাধারণ মানুষের যা হোক একটা নাম থাকা চাই। তাই ছেলেটির নাম অরুন আর মেয়েটির নাম দিলাম শৈলজা। আমাদের এই অরুন আর শৈলজা দিনের পর দিন ছিল ভালো বন্ধু। তাদের একসাথে কাটানো সময়টুকুর বিবরণ জানতে চাইলে আমার ১৩/৮, জিন্দাবাহার লেনের সাদা ক্রিম কালারের বাড়িটায় এসে সব দেখে যেতে পারেন। বলা ভালো, এসে পড়ে যেতে পারেন। এক পশলা প্রবল বর্ষণের পর শরতের মেঘমুক্ত আকাশ যেমন পরিষ্কার, অরুনের পোষা খয়েরিরঙা শালিখের পালকের মতো খয়েরি ডায়েরিটায় তেমনি পরিষ্কার করে লেখা আছে সব।

জিন্দাবাহার লেন! ভারি অদ্ভুত নাম। এবং অদ্ভুতভাবে এটাই এখন আমার ঠিকানা, আমার নিবাস। নিবাস বলতে চিলেকোঠার এই ছোট্ট ঘরটা; যার দরজা পেরোলেই ইয়া বড় ছাদ! ছাদময় ছড়ানো টবে অসংখ্য গাছ। সেগুলোর অধিকাংশেরই নাম জানি না।

এই লেখাগুলোই আপনি দেখতে পাবেন ডায়েরিটার প্রথম পাতায়। গোটা গোটা অক্ষরে নীল কালির কলম দিয়ে লেখা। তারপর যতোই পাতা উল্টাতে থাকবেন, ততোই আপনার কাছে পরিষ্কার হতে থাকবে একে একে। অরুন, শৈলজা, ১৩/৮ জিন্দাবাহার লেন; সব সব।

আমি যেখানটায় থাকি সেই ১৩/৮, জিন্দাবাহার লেনটায় এখন শরতের বিকেল। চিলেকোঠার মরে যাওয়া রোদ, ধনুকের মতো বাঁকা নারকেল গাছটা থেকে সরে গিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো, সাদা রঙের বাড়িটায়- তার আধখোলা জানলার শার্সিতে, বারবার গোঁত্তা খেয়ে ফিরে আসা মাছিগুলোর রূপোলি ডানায়।এখন আমি দাঁড়িয়ে আছি দু’চোখ বন্ধ করে। অবশ্য মাঝে মাঝে একচোখ খুলে কায়দা করে দেখে নিচ্ছি যে- শৈলজা আসছে কিনা! শৈলজা’ই আমাকে এখানে দাঁড় করিয়ে রেখে গেছে। যাওয়ার আগে বলে গেছে, ‘খবরদার! চোখ খুলবে না কিন্তু। আমি এখুনি আসছি।’ দুই চোখই বন্ধ রাখবো কিনা যেহেতু নির্দিষ্ট করে বলে যায় নি, সেহেতু মাঝে মাঝে আমি এক চোখ খুলে চারপাশটা দেখে নিচ্ছি। এতে তো দোষের কিছু নেই! অন্তত, আমার লজিক তো তাই বলছে! শৈলজা আসতে যতো দেরি করছে, ততোই ভেতরে ভেতরে আমার একটু একটু করে অস্থির লাগতে শুরু করেছে। শৈলজা এটা জানে! আমার মনে হচ্ছে, শৈলজা ইচ্ছে করেই অমন দেরি করছে!

ইচ্ছে করে দেরি না করলেও সেদিন শেষ পর্যন্ত শৈলজা এসেছিলো। কিন্তু ততক্ষনে অরুনের মনে হবে যেন কতকাল পেরিয়ে গেছে। ধনুকের মতো বাঁকা নারকেল গাছটায় তখন জমাট বাঁধা অন্ধকার। মাছিগুলোর রূপালি ডানায় তখন ভর করেছে গাঢ় নীল বিষাদ!

*

Once we dreamt that we were strangers.
We wake up to find that we were dear to each other.

নতুন বাসায় এসেই নতুন কলের পানিতে গোসল করে ঠাণ্ডা বাঁধিয়ে ফেলেছিল অরুন। ঠাণ্ডায় অবস্থা একেবারে নাজেহাল দেখে, শেষমেশ বিলুদা-ই অরুনের জন্য দু’তলা থেকে চেয়ে নিয়ে এসেছিলো এক বাটি তুলসি পাতার রস। তাতেই নাকি অরুনের ঠাণ্ডার ভাব কমেছিল। তারপর থেকে বিলুদাকে নয়, অনেকবারই আমরা কারণে-অকারনে অরুনকে তুলসি পাতার রস আনতে দু’তলায় শৈলজার কাছে যেতে দেখবো। তখন আমাদের মনে হবে, অরুন হয়তো প্রকৃতপক্ষে তাই ছিল, শৈলজা তাকে ঠিক যা বলত।

সেদিন ছিল রোববার। অরুন তার ডায়েরির এই পৃষ্ঠায় কাকতালীয়ভাবে কোন তারিখ না দিয়ে শুধু বারটাই লিখেছিল। পৃষ্ঠার উপরে একদম ডানদিকে। না। আমি কোন ভুল করছি না। চাইলে নিজেই এসে দেখে যেতে পারেন। এক পশলা প্রবল বর্ষণের পর শরতের মেঘমুক্ত আকাশ যেমন পরিষ্কার…

তখন ক্লাস এইটে পড়ি। আমাদের মফঃস্বলের বাড়িটার পেছন দিকের দেয়ালে একবার কে যেন কয়লা দিয়ে শয়তানি করে লিখে রেখেছিল ‘আনিকা+অরুন’! একদিন ভোরবেলা। পেছনের উঠান থেকে কয়লা আনতে গিয়ে বাবা দেখতে পান লেখাটা। তখনি ঘুম থেকে কান ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে বাবা আমাকে ফেললেন পেছনের উঠানে। লেখাটা যেখানে লেখা হয়েছিল ঠিক সেখানে। এই আনিকা যে কে, আর তাকে যে আমি সাত জন্মেও চিনি না, এই কথা বাবাকে সেদিন আমি আর বিশ্বাস করাতে পারিনি। কিন্তু আজ খুব ইচ্ছে করছিল, চিলেকোঠার দেয়ালটায় সত্যি সত্যি লিখি অরূপ+শৈলজা । আমাদের মফঃস্বলের বাড়ির পেছনের দেয়ালে কাঠ কয়লা দিয়ে যেমন লেখা ছিল তেমন। শৈলজাকে এই কথা বলতেই সে চোখ কুঁচকে তাকালো। তারপর হেসে বলল, ‘তুমি একটা আস্ত পাগল!’

অরুনকে নিয়ে ঠিক একই কথা আমরা জায়গায় জায়গায় শৈলজাকে বলতে শুনবো। পরদিন সকালবেলায় ছাদের চিলেকোঠার পিছনের দেয়াল ঘেঁষে শৈলজার লাগানো নয়নতারার গোঁড়ায় পানি ঢালতে গিয়ে বিলুদার চোখ গিয়ে পড়বে কাঠ কয়লা দিয়ে লেখা সেই অক্ষরগুলোয়, যেগুলো এর আগে সে ওখানে আর কখনো লেখা দেখতে পায়নি। তখন বিলুদা ভেঙ্গে ভেঙ্গে বানান করে পড়তে চাইবে সেই অক্ষরগুলো। শেষে সেই বোবা অক্ষরগুলো একত্র করে যখন উচ্চারণ করবে বিলুদা আর ফিক করে হেসে দিয়ে অরূপ সম্পর্কে ঠিক একই মূল্যায়ন করবে, তখন আমাদের মনে হবে, অরুন হয়তো আসলে তাই ছিল শৈলজা তাকে যা বলতো।

বিলুদা এখনো ১৩/৮, জিন্দাবাহার লেনের বাড়িতেই থাকেন। আগে যেমন সবার টুকটাক ফাই-ফরমায়েশ খাটতেন, এখনো তাই খাটেন। সপ্তাহে দু’দিন মাঝরাত পর্যন্ত দেশি মদ খেয়ে মাতলামো করেন। কিন্তু একদমই হাসেন না। হাসেন না কেন, জানতে চাইলে কিছুই বলেন না। শুধু একটা নিরব দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে চলে যান।

**

The Bird wishes it were a cloud.
The Cloud wishes it were a bird.

অরুন আর শৈলজা একে অপরের কাছে আসতে পেরে যেন স্বস্তি খুঁজে পেয়েছিল। কি! আমি কিভাবে জানলাম? ঐ যে বইটা, যেটা শৈলজা অরুনকে উপহার হিসেবে দিয়েছিল তার জন্মদিনে, তাতে শৈলজা লিখেছিল,

The Bird wishes it were a cloud.The Cloud wishes it were a bird.

শৈলজা লাইন দু’টো যে রবি ঠাকুরের ‘Stray Birds’ থেকে নিয়েছিল, তা আমি বুঝেছিলাম আরও অনেক পরে। অরুন আর শৈলজার মধ্যে একটা অলিখিত চুক্তি হয়েছিল। শৈলজাদের ১৩/৮, জিন্দাবাহার লেনের বাড়িটার পুরো ছাদজুড়ে আর ছাদের বাইরে যতো গাছ আছে, সেগুলো অরুনকে চেনানোর ভার ছিল শৈলজার। বিনিময়ে অরুন শৈলজাকে পরিচয় করিয়ে দেবে তার ঘর ভরতি যতো বই সেগুলোর সাথে। অরুনের নেশা ছিল রবীন্দ্রনাথ। আস্তে আস্তে মনে হয় সেটা শৈলজার মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছিল।

একদিন শাহবাগের পুরনো বইয়ের দোকানগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে রিক্সার খোঁজ করছি; সঙ্গে মিলি আপা। আমরা বেইলি রোড যাবো। আমি আর মিলি আপা একই থিয়েটারের হয়ে নাটক করি। পুরো বছর জুড়ে বহু কষ্ট করে চার-পাঁচটা নাটক নামাই। দুটো চলে, তিনটা চলে না। পরেরটা যাতে চলে, সেজন্য উঠে পড়ে লাগি। কে জানে! হয়তো সেটাও চলবে না! তখন বেশ বুঝতে পারছি, এইসব নাটক-ফাটক করে আর চলছে না। যেমন চলছে না বিনামূল্যে মিলি আপা নামক এই বিবাহিত মহিলার দারোয়ানগিরি করে। রিকশা ঠিক করে উঠতে যাব, এমন সময় পিছন ফিরে দেখি, মিলি আপা দুজনের সাথে আলাপে মশগুল। মিলি আপার স্বভাব স্কচটেপের মতো। এক জায়গায় জুড়ে গেলে সহজে আর ওখান থেকে ছুটতে চান না। এদিকে আমি রিক্সাওয়ালাকে বুঝিয়ে যাচ্ছি, এই একটু এই আরেকটু বলে। কিছুক্ষণ পর আমাকেও ডাকলেন। মিনিমাম আধঘন্টার মামলা বুঝতে পেরে রিক্সাওয়ালাকে দিলাম ছেড়ে। মিলি আপা আমাকে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা দু’জনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। অরুন আর শৈলজা। কথায় কথায় জানা গেল, শৈলজা মিলি আপার বান্ধবীর ছোট বোন। কালো জর্জেটের শাড়িতে বেশ লাগছিল তাকে দেখতে। আমার মনে হল, শৈলজা বুঝি কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব ঘুচিয়ে নিয়েছে নিজের চারপাশে, যে দূরত্ব সর্ষে খেতের শেষ সীমানায়, শালবনের নীলাঞ্জনে। মিথ্যে বলবো না, শৈলজাকে দেখে আমার মাথায় রবি ঠাকুরের এই লাইনটা নিজের মতো করে উঁকি মেরে গেল। একটা নাটকের জন্য মুখস্থ করতে হয়েছিল এক সময়।

এই কালো রঙটার প্রতি শৈলজার একটা অস্বাভাবিক রকমের দুর্বলতা ছিল। রবীন্দ্রনাথের ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতাটা পড়েই তার কালো রঙটার প্রতি দুর্বলতা জন্মেছিল কিনা, সেটা আর এতো বছর পরে আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না। আমি বলতে পারব না।  কিন্তু এই কবিতাটা যে শৈলজার ভীষণ রকমের প্রিয় ছিল, সেটা আপনি অরুনের পোষা খয়েরিরঙা শালিখের পালকের গায়ের মতো খয়েরি রঙের ডায়েরিটা পড়লেই বুঝতে পেরে যাবেন। তখন আর আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে না। এক পশলা প্রবল বর্ষণের পর…

মিলি আপা মাঝে মাঝে এই ১৩/৮ জিন্দাবাহার লেনের বাড়িটায় আসেন। চিলেকোঠার ঘরটা বারবার ঘুরে ফিরে দেখেন। যে ঘরটায় এখন আমি থাকি। যে ঘরটায় একসময় অরুন থাকতো। আমি শেষ পর্যন্ত আর মিলি আপার বিনে পয়সার দারোয়ানগিরি ছাড়তে পারিনি। যেমন ছাড়তে পারিনি থিয়েটার। মিলি আপাকে না চাইলেও থিয়েটার ছাড়তে হয়েছিল। সে এক অন্য ইতিহাস!

***

Sorrow is hushed into peace in my heart like the evening among the silent trees.

নারী ও পুরুষের হৃদয়িক সম্পর্কের শেষ পরিনতি কী? বিয়ে? হয়তো সেটাই কাম্য। সব বেলায় কি তাই হয়! অরুন আর শৈলজার বেলায় কি তাই হয়েছিল?

একদিন বিকেলের  শো শেষ করে মিলি আপাকে সাথে নিয়ে বের হয়েছি। নিউ মার্কেট যাবো। মিলি আপাকে রিক্সায় বসিয়ে রেখে আব্বাস মামার দোকান থেকে এক কাপ পুদিনা পাতার চা আর একটা  গোটা সিগারেট শেষ করে মাত্র রিকশায় উঠবো। হঠাৎ অরুনকে দেখতে পেলাম আমাদের কমপ্লেক্সের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে যেহেতু দেখতে পাননি তাই আমিই এগিয়ে গেলাম। কাছে যেয়ে দাঁড়াতেই আমাকে চিনতে পারল। অবাক হয়ে দেখলাম, তার মাথার চুলগুলো ভীষণ উষ্কখুষ্ক। চোখের নিচে কালশিটে পড়ে গেছে।

তুমি কীভাবে মরতে চাও? এই ধরনের প্রশ্ন নিশ্চয়ই কেউ কাউকে করে না! এমনকি নিজেকেও না! শৈলজাও নিশ্চয়ই করেনি! শৈলজা কি কোনদিন ভাবতে পেরেছিল, এতো তুচ্ছ উপায়ে তাকে মরতে হবে? সে একবার কোথায় জানি পড়েছিল, একটা লোক গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ-ই সামনে পড়া একটা কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিজেই মরে গিয়েছিল! লোকটা কেন এমন করলো এটা ভেবে তখন সে বেশ একটু অবাকই হয়েছিল। তার এই অবাক হওয়ার ব্যাপারটা পরে একদিন সে অরুনকেও জানিয়েছিল। অরুন এটা তার ডায়েরিতে লিখে রেখেছিল। লেখাটা এখনো আছে। এক পশলা প্রবল বর্ষণের পর শরতের মেঘমুক্ত আকাশ যেমন পরিষ্কার, অরুনের পোষা খয়েরিরঙা শালিখের পালকের গায়ের মতো খয়েরি ডায়েরিটায়, তেমনি পরিষ্কার করে লেখা আছে সব।

সেদিন ছিল শরতের ঠিক মাঝমাঝি। তুলোর মতো মেঘগুলো নাগরিক আকাশটাকেও যেন বঞ্চিত করতে চায়নি; হাজারো বিন্যাস নিয়ে উড়ে যাচ্ছিল দূর থেকে দূরে। আরও দূরে। অরুন আর শৈলজার বিয়ের তখনো ঠিক এক সপ্তাহ বাকি। বিয়ের কার্ড ছাপানো শেষ। মিলি আপাকে টেলিফোন করে শৈলজা কার্ড ছাপানো শেষ হওয়ার খবরটা জেনে নিয়েছিল। মিলি আপার হাজব্যান্ড অন্য অনেক কিছুর সাথে এসবের বিজনেসও করেন। মিলি আপা বলেছিল, দুপুরের পর কাউকে পাঠালেই সে গিয়ে নিয়ে আসতে পারবে। কাউকে মানে বিলুদাকে পাঠানো। বিলুদা শৈলজার মামাতো ভাই। কিছুটা আত্মভোলা ধরনের মানুষ। ঠিক কখন থেকে তিনি খালার বাসায় আছেন, তা বোধহয় তার নিজেরও মনে নাই। শৈলজাদের পরিবারের যে কাজগুলো আর কেউ করতে চায় না, সেগুলো তিনিই হাসিমুখে করে থাকেন। কার্ড ছাপানো শেষ হওয়ার খবরটা শৈলজা অরুণকে তখনো দেয়নি। বিকেলে তার হাতে মূর্তিমান কার্ডটা দিয়েই তাকে চমকে দিতে চায়।

১৩/৮ জিন্দাবাহার লেনটায় তখন শরতের বিকেল। চিলেকোঠার মরে যাওয়া রোদ, ধনুকের মতো বাঁকা নারকেল গাছটা থেকে সরে গিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো সাদা রঙের বাড়িটায়, যার নিচ দিয়ে একটু আগে বিলুদাকে আসতে দেখে শৈলজা অরুনকে চোখ বন্ধ করতে বলে নেমে গিয়েছিল। অরুন মাঝে মাঝে এক চোখ খুলে দেখে নিচ্ছিল, শৈলজা আসছে কিনা। এসবের কিছুই অবশ্য তখন আর শৈলজার জানবার কথা নয়।

আমার হাত থেকে বিয়ের কার্ডগুলো আগে থাকতে কেন নিল না শৈলজা? আমার হাত থেকে কার্ডগুলোকে এমন করে রাস্তার মাঝখানেই পড়তে হলো কেন? শৈলজাই বা কেন আগ-পাছ চিন্তা না করে রাস্তা পার হতে যাবে কার্ডগুলো আনার জন্য? আর যদি শৈলজা যাবেই, কেন একটা গাড়িকে তখনই আসতে হবে তাকে চাপা দেয়ার জন্য? এই সব প্রশ্নের আসলে কোন উত্তর হয় না। কোন উত্তর দেয়া যায় না। মাঝরাতে দেশি মদের নেশা যখন চুড়ায় উঠে, তখন বিলুদা এই সব প্রশ্নই নিজেকে করেন  আর নিজের গাল থাপড়ান, চুল টানেন। তখন তাকে আমি আর চিনি না। তখন তিনি অন্য এক বিলুদা।

মিলি আপাকে সেদিন শুধু বিয়ের কার্ডটা দেয়ার জন্যই অরুন এসেছিল। সবাইকে বিলি করা নাকি শেষ হয়েছে। আমাকে বলছিল, চিলেকোঠার ঘরটা ছেড়ে দিয়েছে। কোথায় যাবে জিজ্ঞেস করলে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে। আর কিছুই বলেনি। না, বলেছিল। বলেছিল, চাইলে আমি ঘরটা নিতে পারি। বললে ব্যবস্থা করে দিয়ে যাবে। তারপর তার আর কোন খোঁজ পাইনি।

জিন্দাবাহার লেন! ভারি অদ্ভুত নাম। এবং অদ্ভুতভাবে এটাই এখন আমার ঠিকানা, আমার নিবাস। নিবাস বলতে চিলেকোঠার এই ছোট্ট ঘরটা; যার দরজা পেরোলেই কিনা ইয়া বড় ছাদ! ছাদময় ছড়ানো অসীম শুন্যতা। সেই শূন্যতার ভাষা কী, তা আমার জানা নেই।

****

আমার মুভি দেখার সালতামামি- ১ম কিস্তি

movie watchlist1
  • The Secret in Their Eyes (2009): অসাধারণ একটা আর্জেন্টাইন ক্রাইম থ্রিলার। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন এক সুদর্শন আর এক সুদর্শনা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রিকার্ডো ড্যারিনের জাদুকরী অভিনয় আর অনিন্দ্যসুন্দর ভিল্লামিলের সোনালি দ্যুতি থেকে চোখ সরিয়ে এক মুহূর্তের জন্যও জাগতিক অন্যকিছুর উপর চোখ রাখার কোন ফুসরত পাইনি বলতে গেলে। বহুবার দেখলেও এই ঘোর কাটবার নয়! আমার রেটিং: ৯.৮
  •  Spring, Summer, Fall, Winter… and Spring (2003): কিম কি-দুকের কোনো কাজের সাথে আমার এই প্রথম পরিচয়। প্রথম পরিচয়েই তাঁকে অনেক আপন বলে মনে হয়েছে। কিছু নিরীহ ঘটনা পরম্পরার যে এতো তাৎপর্যময় এবং একই সাথে বিশদ অর্থ থাকতে পারে, তাঁর এই মুভিটা না দেখলে কখনো মনে হতো না। তাঁকে নিয়ে আমার প্রত্যাশা অনেক। এই মুভিটা দিয়ে সবে শুরু! ধীরে ধীরে তাঁর সবগুলো সৃষ্টির অভিজ্ঞতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারবো বলে আশা পোষণ করি। আমার রেটিং: ৯.৫
  • Turtles Can Fly (2004): সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর বানানো প্রথম ইরাকি সিনেমা। যুদ্ধের কারণে উদ্বাস্তু কিছু শিশু-কিশোরের অভিভাবকহীন, উড়নচণ্ডী জীবনের ছবি একের পর এক দেখিয়ে যায় সিনেমাটি। বাহমান ঘোবাদি-র অসাধারণ পরিচালনা এবং সব ক্ষুদে অভিনেতা-অভিনেত্রী’র একই সমান অনবদ্য অভিনয় ছিল দেখার মতো। আমার রেটিং: ৮.৯
  •  Oh My Friend (2000): পুরুষ ও নারীর মধ্যে কি কামহীন, পরিণয়হীন বন্ধুত্ব সম্ভব? আমি বলি, সম্ভব না। কিন্তু বিষয়টিকে সম্ভব প্রমাণ করতেই যেন কোমর বেঁধে বানানো হয়েছে সিনেমাটি! খুবই গতানুগতিক এবং সহজে অনুমেয় তামিল এই মুভিটি উপভোগ করেছি না বলে, বলা উচিত শ্রুতি হাসানকেই বেশি উপভোগ করেছি। এটাই সত্য! আমার রেটিং: ৬.৫
  • Talaash: The Answer Lies Within (2012): হিন্দি সিনেমা আমার খুব বেছে বেছে দেখা হয়। এই সিনেমাটি দেখবো দেখবো করে দেখা হয়ে উঠেনি অনেকদিন। অবশেষে ফুসরত মিলল দেখার। সময় বৃথা যায় নি। মুভির সাসপেন্স ধরে রাখাটা চরম লেগেছে। পানিতে ডুবে ছেলের মৃত্যুটা আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করা যেত। আমার রেটিং: ৮.০
  •  Wake Up Sid (2009): এই আমার শহর, জানলা ও ঘর। শ্যাওলা প্রাচীর জানে, কে আপন-পর! মুম্বাই শহরের আলো-হাওয়ায় বেড়ে উঠা একজন যুবক নিজেকে খুঁজে পায়, এই শহরে সদ্য আসা আরেকজনের বন্ধুত্বের প্রশ্রয়ে। কিন্তু নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব কি শুধুই বন্ধুত্ব? অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফি। রনবীর কাপুর অসাধারণ, আর কঙ্কনা সেন শর্মা তো অনেক আগে থেকেই অসাধারণ! আমার রেটিং: ৮.১
  •  The Vow (2012): I vow to help you love life, to always hold you with tenderness and to have the patience that love demands, to speak when words are needed and to share the silence when they are not, to agree to disagree on red velvet cake, and to live within the warmth of your heart and always call it home……. I vow to fiercely love you in all your forms, now and forever. I promise to never forget that this is a once in a lifetime love….

এই মুভি নিয়ে কিছু বলা আমার কাজ না। আমার কাজ শুধু যখন সময় হয়, তখন মুভিটা দেখা। যতবার সম্ভব দেখা। বলার বেলায় কেবল একটা জিনিসই বলতে পারি,  Love you, Rachel McAdams!!!  আমার রেটিং: ৯.১

  •  Shanghai (2012): একই নামে আরও একটি মুভি আছে। পরিচালক দিবাকর ব্যানার্জি-র এটা মাথায় রাখার দরকার ছিল। কোন জায়গায় জানি পড়েছিলাম, এই সিনেমাটি আরেকটা কোন দেশীয় সিনেমার নাকি রিমেক! কিন্তু পরিচালক শেষ পর্যন্ত এটিকে উৎকৃষ্ট দেশীয় প্রোডাক্ট বানিয়ে তবে ছেড়েছেন! এখানেই তাঁর মুন্সিয়ানা। পুরো সিনেমাজুড়ে অভয় দেওল-কে একজন সরকারি আমলা ছাড়া কস্মিনকালে তিনি আর কিছু হতে পারেন বলে মনে হয় নি। ইমরান হাশমি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা চরিত্রে অভিনয় করে তাঁর জাত চিনিয়েছেন। কাল্কি কয়েচলিনকে (Kalki Koechlin) দেখে বরাবরের মতো বিরক্ত লেগেছে। এটা অবশ্যই আমার ব্যক্তিগত অভিমত। আমার রেটিং: ৮.৫
  •  Life is beautiful (1997): রবার্তো বেনিনি’র একটি অনবদ্য ক্লাসিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে হিটলারের ইহুদী নিধনের নৃশংস বাস্তবতাকে উপজীব্য করে বানানো সিরিয়াস কমেডি ঘরানার মুভি এটি। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও পুত্রের দিকে তাকিয়ে তাকে আশ্বস্ত করে, পিতার হাসিমুখে পুত্রকে অতিক্রম করে যাওয়ার দৃশ্য বিশ্ব চলচ্চিত্রের এক অসামান্য সম্পদ বলে মনে করি। আমার রেটিং: ৯.৯
  •  Utsab: The Festival (2000): ঋতুপর্ণ ঘোষকে চিনতে অনেকটাই সাহায্য করবে এই সিনেমাটি। শারদীয় একটি উৎসব ‘পূজা’; এই পূজাকে উপলক্ষ করে এককালের একটি বনেদি বাড়ির মানুষগুলোর নিজেদের সম্পর্কের জটিলতাকে আবিষ্কার করা হয়েছে এক অনায়াস দার্শনিকতায়। ‘অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া…’ রবি ঠাকুরের এই গানটি বিশেষ মনে ধরেছে, যেমন মনে ধরেছে অর্পিতা পাল-কে! আমার রেটিং: ৮.৯

তবুও শরত

আজকের শহুরে আকাশটা হতে পারতো সুনীল।
আর তার বুক জুড়ে ভেসে বেড়ানো মেঘগুলো?
হতে পারতো সেগুলো সাদা;
যেমনটা থাকার কথা এই শরতে।
আজকে আমার শহরে বায়ুমণ্ডলের ওপারের আকাশটা
আমার চোখে যেমন নীল নয়,
মেঘগুলোও তেমনি সাদা নয়।

শরত আসতো আমার শৈশবের গ্রামে, তার
কুয়াশাভেজা শূন্যতা ছড়ানো সবুজ মাঠটায়।
শরত আসতো সব ভুলে ছুটে চলা এক
বালকের মাঝে, যার সদ্য শৈশব পেরোনো মন
হারাতো আকাশ নীলে।
শরত আসতো, এখনো আসে আমার
কৈশোরের গন্ধ মাখানো নীরব আঙিনায়,
শিউলি বিছানো ভেজা সবুজ ঘাসের ডগায়
থাকা এক বিন্দু শরত শিশিরে।

আর এখন এখানে, এই শহরে
শরত আসে ক্যালেন্ডারের নতুন পাতায়,
কাশফুলের রঙিন ফটোগ্রাফে।

সুতপা যেদিন নিজেই লাল কৃষ্ণচূড়া হয়ে যায়

4571220357_b8a0bd9a64_b

লাল লাল ফুল সমেত কৃষ্ণচূড়া বরাবরই খুব প্রিয় ছিল সুতপা’র। বলতো,
আর কোন ফুল দেখতে এর থেকেও সুন্দর হয়, দাদা?
আর কোন গাছ পারে নিজের শরীরে এমন করে
আগুন লাগাতে?
আমি শুনতাম। শুনতাম আর হাসতাম।
ধুর, পাগলী! এর থেকে বাগানবিলাসের ঝোপ কত সুন্দর দেখতে!
ওই যে পিকলুদের পেছনের বাগানে ফুটে আছে নীল অপরাজিতা?
সেটাই বা কম কিসে!

সুতপা আমার বোন। তখন রোজ বেণী করে স্কুলে যায়।
স্কুল শেষ হলে, আমিই গিয়ে নিয়ে আসি রোজ। স্কুলের মাঠে লাগানো
কৃষ্ণচূড়া গাছটা দেখিয়ে রোজই একই কথা বলে,
আর কোন ফুল দেখতে এর থেকেও সুন্দর হয়, দাদা?
আর কোন গাছ পারে নিজের শরীরে এমন করে
আগুন লাগাতে?

আমি রোজই শুনি। শুনি আর হাসি।

এককালে বেণী দুলিয়ে স্কুলে যাওয়া ছোট্ট সুতপা একসময়
ভার্সিটি যায়। সেই ছোট্ট সুতপা। যে বলতো,
আর কোন ফুল দেখতে এর থেকেও সুন্দর হয়, দাদা?
আর কোন গাছ পারে নিজের শরীরে এমন করে
আগুন লাগাতে?

ভার্সিটি বন্ধ। সুতপা আসছে।
পরের দুইদিনই হরতাল। মর্জি হলে তার পরের দুইদিনও।
তাই দেরি না করে সুতপা আজকেই আসছে।
চারটের ট্রেনে। একাই।
সুতপা এখন অনেক বড়।
সেই ছোট্ট সুতপা, যে আমার বোন, লাল কৃষ্ণচূড়া যার বড়ো প্রিয় ছিল।

সুতপা-কে নিয়ে আসাটা আমার অনেক দিনের অভ্যাস।
অন্তত স্টেশন থেকেও তো নিয়ে আসা যায়!
রিক্সা না নিয়ে হেঁটেই রওনা দিই। সৃষ্টিছাড়া
কৃষ্ণচূড়া কি আর দোকানে কিনতে পাওয়া যায়!

স্টেশনে পৌঁছুতে দেরি হয়ে যায়। প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা
সুতপা’র ট্রেন তখন জলন্ত অঙ্গার। গাছ না পারলেও
মানুষ তো পারে, নিজেদের শরীরে এমন করে আগুন লাগাতে!

সুতপা আর আসেনি।
সেই সুতপা, লাল কৃষ্ণচূড়া যার বড়ো প্রিয় ছিল। যে বলতো,
আর কোন ফুল দেখতে এর থেকেও সুন্দর হয়, দাদা?
আর কোন গাছ পারে নিজের শরীরে এমন করে
আগুন লাগাতে?

সেই ছোট্ট সুতপা, যে ছিল আমার বোন,
যে লাল কৃষ্ণচূড়ার কথা ভাবতে ভাবতে একদিন নিজেই
লাল কৃষ্ণচূড়া হয়ে গিয়েছিল।